আমার স্মী, গাসত*, 'পিয়ের, ফ্রাসোয়া, জেমস ৰং
নেলঙখক্ডে কথা
বেশ কয়েকবার কলকাতায় গিয়ে থাকার সুবাদে অসাধারণ কিছু মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটার সৌভাগ্য হয়েছে। তাদের কাছ থেকে এত পেয়েছি, আমার জীবনে তাদের প্রভাব এত বোঁশ যে আমি স্থির করে ফেললাম, 'িবশ্বের এক অত্যাশ্চর্য প্রান্ত আনন্দ নগরের মানুষজনের জীবনের গল্প আমাকে শোনাতেই হবে।
এই' গল্পে নারী আছে, পুরুষ আছে, শিশু আছে। নংঠ'র প্রকাতি ও প্রতিকূল পারাস্থাতর চাপে ভিটেমাট থেকে উচ্ছেদ হয়ে এরা সকলেই নিক্ষিপ্ত হয়েছে এমন এক শহরে, যার আশ্রয় দেওয়ার ক্ষমতা কঙপনাতীত। আঁবশ্বাস্যরক সাল বাধা ও বিপাত্তর সম্মুখীন হয়েও মানুষ কী ভাবে বাঁচতে শেখে, সহমর্মীতা ও ভালবাসার প্রেরণা পায়, এই কাঁহনীতে সে কথাই বলতে চেম্টা করোছি।
শদ 'সাঁট অফ জয়' লেখার আগে কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বাভন্ন জায়গায় আমি তন বছর ধরে অনুসন্ধান চাঁলয়োছ। বহু লোকের ব্যান্তগত ডায়োর এবং চিঠিপত্র আমাকে দেখতে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলা, 'হান্দ ও উর্দু দোভাষীর সাহাযা নিয়ে আমি দুশ'রও বৌশ লোককে 'ইন্টারাভউ' করোছ। বইয়ের যাবতীয় সংলাপ ও ববৃতিন ভীত্ত হল এইসব সাক্ষাংকার।
কাহিনীর কৃশীলবরা প্রকৃত পাঁরচয় গোপন রাখতে চেয়েছেন। কাঙ্জেই কিছ] কিছ, চারনতর এবং ঘটনাকে আম উদ্দেশামূলক ভাবেই এখানে পাল্টে দিয়োছি। তাহলেও যে কাহনী বর্ণনা করোছ তা পুরোপ্যার বাস্তবানূগ।
ব্যাপক গবেষণার ফল হলেও এই বইতে ভারতবর্ষের সামাগ্রক চিত্র ফুটিয়ে তুলেছি, এ কথা কখনোই বলব না। ভারতের প্রত মার ভালবাসা গভীর । ভারতবাসীর বুদ্ধিমত্তা, কাতিত্ব এবং প্রাতকূলতাকে কাটিয়ে ওঠার অধাবসায় আমাকে মুগ্ধ করে। এই দেশের মহত্ব, গারমা ও বৈচিত্র সম্পকে আমি বিশেষ- ভাবে অবাহত। সুতরাং পাঠক যেন মনে না করেন. সমগ্র ভারতায় সত্তাই কাঁহনীর এই সাঁমিত পরিসরে প্রাতীবাম্বত। বরং এই বই গোটা দেশের এক ক্ষুদ্ধ অংশ কলকাতার ক্ষ,দ্রুতর প্রান্ত আনন্দ নগরেরই প্রাতিচ্ছাব।
দোমিনিক লাপিয়ের
প্রখম অধ্যায় আুহ্নিহ জলাত্জেল্ ক্যোন্তি
এক
মানুষটার চেহারা মোগল যোদ্ধাদের মতন। তার মাথায় এক ঝাক শন্ত ঘন কোঁচকান চুল : গালের পাশ 'দিয়ে নেমে এসে মোটা জুলাঁপ নোয়ানো পুরু গোঁফের সঙ্গে মিশেছে। বালভ্ঠ খাট চেহারার এই মানুষটার লম্বা লম্বা হাত দুটো পেশী- বহুল আর ধনদকের মতন বাঁকান দুটো পা। তবে 'দখতে যেমনই হ'ক না কেন, বাঁতশ বছর বয়সের হাসার পাল নেহাতই একজন 'ীনরীহ চাষী । পঞ্চাশ কোট ভারতবাসীর একজন, জীবনধারণের জন্যে যাদের মাতা ধ.রন্রীর কাছে কৃপা-করুণা চাইতে হয়।
খড়ের ছাউীন আর মাটির দেয়াল লেপে হাসার তার দু'ঘরের কণ্ড়ে বাঁনয়েছে বাঁকুলি গ্রামের প্রান্তে । ভারতের উত্তর-পূর্বের এক অঙারাজ্য হলো এই পশ্চিমবগ | মাপে স্কঢল্যাণ্ডের চেয়ে বড় এই পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা বৃহত্তর লণ্ডনের জন- সংখ্যার পাঁচগুণ বোঁশ। বাঁকালি এই পাঁশ্চমবঙ্গেরই এক ছোট্র গ্রাম এবং হাসারির দু ঘরের কুড়ে এখানেই অবাঁস্থত। হাসারর বউয়ের নাম অলকা। অলকা যুবতা এবং ফর্সা । তার চোখ দট ভার পাঁবন্। যখন তাকায় মনে হয় যেন দেবদ্তের দৃম্ট। তার নাকে আছে সোনার নথ ; আর পায়ে মল। যখন সে হেটে যায়, ত বঝমঝম শব্দ হয়। তিন লল্তানের মা অলকার বড়টি মেয়ে, নাম অমৃতা । তার বয়স বছর বারো। বাপের বাদামি চোখ আর মায়ের গায়ের রঙ পেয়েছে সে। পরের দুটি ছেলে, নাম মনোজ আর শম্ভু। মনোজের বয়স দশ বছর আর শম্ভ্র দু বছর। ছেলে দুাটর গড়ন-পেটন বেশ বাঁলম্ঠ। মাথায় ঘন কালো চুলের রাশ এলোমেলো হয়ে আছে অযড্বে। ছেলে দুটি ভার ছটফটে। গিরগিটি দেখলে তার পিছনে দোৌড়বে পুকুরের পাড় 'দিয়ে। এতেই ওদের যত মজা । তাই মোষ চরানোর চেয়ে এই কাজটিই তাদের ভাল লাগে। হাসারর বাপও থাকে পাঁরবারের সঙ্গে একজন হয়ে? তার নাম প্রদীপ । রোগা চেহারার প্রদীপের বাঁলরেখাবহ্ল শীর্ণ মুখখানায় শোভা পাচ্ছে শেবেতগুচ্ছের মতন একজোড়া পাকা গোঁফ। হাসাঁরর মা নালনীর কোমরভাঙা শরীরটা নোয়ানো। মার মুখখানা আখরোট ফলের মতন দাগকাটা। হাসারর প'রবারে আরও মানুষ আছে। দুই ভাই, তাদের বউ ছেলেমেয়ে_সব মিলিয়ে মোট ষোলজনের পরিবার হাসারর।
মাথা নিচু দরজা দিয়ে কৃড়েতে ঢুকলে তাপদগ্ধ গ্রীঁচ্মেও একটা ঠাশ্ডা আমেজ পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি কনকনে শীতের রাতে কৃ'ড়ের ভেতরটা থাকে বেশ আরাম- দায়ক গরম। ঘরের কোলে টানা বারান্দা। লালসাদা বোগনাঁভলা ফুলের ঝাড় 'দিয়ে বারান্দাটা ছাওয়া। সেই ছায়ায় বসে অলকা কাঠের ঢেশীকতে পা 'দাঁচ্ছল। ঢেশকর মুখে একটা কাঠের মুষল. অলকার পায়ের চাপে মুষলটা উঠছে নামন্ছ আর শব্দ ইচ্ছে টিকটাক। পাশে বসে আছে অমৃতা । মুঠো ভার্তি ধান সে ঢেলে দচ্ছে মৃষল- টার তলায়। খোসা ছাঁটাই হবার পর ধান থেকে চালগীল বৌরয়ে আসছে । একটা ধামায় ভা্ত করে অমৃতার ঠাকুমা সেগুলি ঢেলে দিয়ে আসছে উঠোনের মাঝখানে বাঁশের ঠেকা দিয়ে তোর গোলাঘরে। এই গোলাঘরটাই হলো এই পাঁরবারের সম্বং- সরের আশ্রয়। এট আবার পায়রাদেরও থাকার জায়গা ।
৩
ওদের কুণ্ড়ের চারপাশে যতদূর দৃ।ম্ট যায় শুধু ধানের ক্ষেত। সোনা রঙের এই ধানক্ষেতের বিশাল ব্যাষ্তির মধো। বোঁচিন্ের মতন কতকগুলো রঙের ফোঁটা । কোথাও ঘনসবজ আম বাগান, কোথাও ফিকে রঙের তল-তমালরাজী আবার কোথাও বা বাঁশের ঝাড়। চতুভর্যজাকার ধানক্ষেতগীল সেচনালার আঁটসাঁট বাঁধনে যেন সেলাই করা । নালার জলে প্রাতিফাঁলিত হয়ে আকাশের নীলমা ঝলমলে জাঁরর মতন দেখায়। পুকুর আর ডোবার ওপর ঝে'লে সর, বাঁশের সাঁকো । পুকুরের জলে ফুটে থাকে পদ্ম আর শালুক। জলের বুকে রেখা ঢেনে স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়ার হাসের দল। হাতে পাঁচন-বাঁড় 1নয়ে আলের উপর দিয়ে মাহষের দল তাঁড়য়ে ?নয়ে যায় রাখাল বালকেরা। ওরা চলে যাবার পর রাঙামাটর ধুলো ওড়ে ওদের পিছনে । এক- সময় শেষ হয় এই »বাসরোধকারণ উত্তপ্ত 'দিন। রক্তবর্ণ গোলাকার চাকার মতন মার্তন্ডদেব পশম আকাশে ঢলে পড়েন। তখন দাঁক্ষণ-সমূদ্রের বুক থেকে ভেসে আসা বাতস সোহাগস্পর্শ দিয়ে সকলের তাঁপিত দেহ জড়িয়ে দেয়। উদার এবং সীমাহীন বিস্তৃত ক্ষেতভাঁমর উপর দিয়ে ভেসে আসে অগাঁণত পাঁখদের কল- কাকলি। উড়তে উড়তে ওরা নীচু হয়ে নেমে আসে প্রায় ধানক্ষেতের বুকের কাছা- কাছ এবং আসন্ন রান্রকে আহবান জানায়। বাঙলাদেশ গান ও গীতিকাব্যের দেশ। জ্যোৎস্না রাতে রাধাক:ফের মধুর প্রেমগীতি বাঁশির সুরের দোলায় ভাবৈশবর্য ছড়ায় তখন পরম প্রেমময়ী শ্রীরাধা গোঁপিনী সমাভব্যাহারে কষ্চের নৃতাসাঙ্গনী হন এবং মহাভাব বিক:শত করেন।
সূর্য আঅদৃশা হবার পর গোধালক্ষণ আসে। গোধূলি অর্থাৎ গাভীরা যখন ক্ষেত থেকে রাতের আশ্রয়ের জন্যে গোয়ালে ফেরে। হাসারও এদের সঙ্জো হাল কাঁধে নিয়ে ফেরে। হাটার সৃবিধের জন্যে তার পরনের কাপড়খানা হাঁটুর ওপর টেনে তোলা । হাসার ঘরে ফেরে শিস দিতে দিতে খুশীর মেজাজে । সন্ধ্যা যত আসন্ন হয় ততই মাথ।র ওপর কপোতকুলের ঘাঁর্ণচক্র বাড়তে থাকে। তেতুল গাছের মাথায় ঘরে ফেরা চড়ুই পাঁখদের কাঁচরামাঁচর শব্দ যেন বাঁধর করা একতান শুর, করে দের তখন। গায়ে শ্রীরামচন্দ্রের তিন আঙুলের ছাপ নিয়ে দুটো কাঠাবড়াল গাছের গায়ে ছুটোছনাট করে বেড়ায় । বকেরা ব্যস্ত হয় দ্রুত বাসায় ফিরতে । রাস্তার নোঁড় কুকুরটা মাটি শুকে শদুকে খদুজে বেড়ায় একটা উপয্স্ত থাকার জায়গা । তারপর ক্রমশ পাঁখদের কলকাকাঁল থেমে যায়। ক্ষীণ হয়ে আসে ঢেশকর টকটাক শব্দ। পাঁরথবীর বুকে নেমে আসে নিরবাচ্ছন্ল নিশশীথনীর নৈঃশব্দ। কিন্তু এই নৈঃশব্দ স্থায়ী হয় না। ঝিশিঝর ছন্দোময় একতানে ভেঙে যায় রাতের নৈঃশব্দ।
শরম দেশে সূর্যাস্তের পাঁচ মানিটের মধ্যেই অন্ধকার নেমে আসে । সর্যাস্তের আগে একদণ্ড এবং পরে একদন্ড. এই দুই দণ্ডের মিলন সময় হলো সায়ংসন্ধ্যাকাল ৷ প্রীতাঁদনের মতন সোদনও ঠিক এই সময়ে হাসাঁরর বউ অলকা সায়ংসন্ধ্যাকাল পালন করাছল। শাঁখ বাজিয়ে রাত্রকে সে আবাহন করলো । তার এক ননদ প্রদীপ জেহলে বাস্ত্র থেকে অপচ্ছায়া বিতাড়ন করলো। তাদের ধারণা যে, রাস্তার ধারে দাঁড়য়ে থাকা একশ' বছরের বিশাল বটগাছতলাট প্রেতাঁপশাচ মুস্ত হয় এই সন্ধ্যা- বাঁধ পালনের দ্বারা । সন্ধ্যাবাধ পালন শেষ হবার পর শুরু হলো গাভীচর্চা। গাভনটিকে গোয়ালে' বাঁধা হলো বটে, কিন্তু অবাধ্য ছাগলটা বাগ মানতে চাইছিল না। সবাইকে সে এঁদক ওঁদক ছোটাচ্ছিল। অবশেষে তাকেও খোঁটায় বেধে উঠনের কা তারের বেড়াটা টেনে বন্ধ করে দিল হাসার হাসার জানে যে গোয়ালের সুরক্ষা না
৪
হছুল শেয়ালের পেটে ঘাবে সবাই । সন্ধ্যাবাধর পরে আছে ধর্মীনুজ্ঠান রীতি । ভারত- ₹র্ষের প্রায় সব ছিন্দুর সংসারেই পাঁরবারক আরাধ্যা দেবদেবী অছেন। এরাই সেই সংসারের অভিভাবক ' ভালমন্দ যাই হক, এরাই যেন তার দায় নেন। ভারতবর্ষ যেমন প্রাচীন দেশ তেমান প্রাচীন এই ধর্মীয় রীতি। সংসারের যান কনর [তাঁনই এই রীতি পালন করেন। তাই হাসারর মা অলোর নৈবেদ্য দিয়ে ঠাকুরদেবতার দুখ দেখলেন। এ*্রা হলেন রাম এবং সীতা, যান মর্তেয ফলোপধায়ী দেবী বলে পু'জতা। আর আছেন পদ্মাসনা লক্ষমী আর গক্মুখ গণেশ । লক্ষ হলেন এশ্বধেরি এবং গণেশ সৌভাগ্যের দেবদেবী। হাসারর মা'র ঠাকুরঘরে আরও দুজন দেবতার পট আছে। পট দুট “পুরনো, মালন। এদের একজন হলেন ননীচোরা গোপাল। নন্দদুলালের এই ভ্গাট 'হিন্দঘরে খুব আরাধ্য । অন্যজন হলেন হিন্দ, পুরাণের কিংবদাঁণ্তির নায়ক বানর দেবতা হনুমান।
সব শেষ হলে মেয়েরা ষখন রান্নার কাজে বাস্ত হয়ে পড়লো, হাসার তখন দ*ইভাইকে নিয়ে বাপের কাছে এসে বসলো । যণই ফখলের মাঁদর গন্ধ বাতাস ভার করে তুলেছে। অন্ধকার রাতকে বদ্ধ করছে জোনাকির অ.লো। তারাভরা আকাশের গধ্যে শলান হয়ে আছে একফাঁল চাঁদের জোছনা । প্রাতপদের চাঁদ । শিব, যান [বিশেব- *বর, 'তানও মস্তকে চন্দ্রকে ধারণ করেন, তান '্রনেত্র এবং মংগলময় ; তিনিই জগতের শ্রাণকর্তা এবং দারদ্রুদুঃখদহনকারী। সেই িবকে নমস্কার করলো ওরা। ওরা চারজনেই সোঁদন গভীর ভাবনা ডূলে ছিল। হঠাৎ সবাইকে সচাকিত করে বুড়ো প্রদীপ স্বগতোন্ত করে বলে উঠলো, “কয়লার ময়লা ধূলেও যায় না। যার প্রাভকার নাই তার জবলা সইতেই হবে।'
হাসারির বাপ মনে করতে পাবে না পুকুরের এই পদ্মগুলো ঠিক কত যুগ পরে এইভাবে ফুটছে আর শহাকয়ে যাচ্ছে । তার জল্ম থেকে কত পদ্মই ত ফুটলো আর ঝর গেল। ঘাড় নাড়তে নাড়তে বুড়ো বললো, 'আমার আর পুরনো কথা কিছু মনে পড়ে না। সব হারিয়ে গ্যাচে কপুরের মতন। কত কথা বেমাল্ম ভূলে গোছ। অনেক বয়েস ত হলো। এবার যেতে পারলেই হয়। কে জানে আর ক চুপাঁড় চাল মাপা আচে আমার !' তবে একথা ঠিক যে বুড়ো প্রদীপ জানতো যে এতদিন তারা বেশ সম্পন্ন চাষী ছিল। ছ'টা ধানের মরাই ছিল তাদের। আর ছিল আট একুর উর্বর জমি। ছেলেদের ভাঁবষ্যতের সংস্থান করে দিয়েছিল প্রদীপ। মেয়েদের ভাল ঘরে বিয়ে দিয়োছল উপযুক্ত পণ দয়ে। বুড়োবুৃড়ির শেষ দিন ক'টা যাতে শাঁলিহহ কাটে তারও সংস্থন করছিল। একটুকরো জাম আর পৈত্রিক এই ভদ্রাসনটা দেখিয়ে বড়কে বলোছল, 'যাদ্দন না যমে লিচ্ছে তাঁদ্দন আমরা বুড়োবুঁড় এখানে "শে কাটাতে পারবো । ক বলো?"
কিন্তু বুড়ো প্রদীপের কামনার মাপটা একটু বড় হয়ে গিয়েছিল। একখন্ড এই জমিটা তার বাপের কাছ থেকে পাওয়া । তখনকার জমিদার খুশী হয়ে দান সঙ !গয়োছল অনুগত প্রদীপের বাপকে। গে আজ কতাঁদনের কথা৷ তারপর কত ঘটনা ঘটেছে । আগের সেই জাঁমদার মরেছে । মরেছে প্রদীপের বাপ। হঠঘখ একদিন নতুন জাঁমদারের পেয়াদা এসে জাঁনয়ে গেল. জাঁমটা যেন ফেরতের বাবস্থা করে প্রদীপ। কোনো দানপন্ন লিখে যায়নি জমিদার। নেই কোনো সাক্ষীসাব্দ। তবুও প্রদীপ হাতছাড়া করলো না জমিটা! নতুন জমিদার আদালতে নালিশ করলো । তারপর এক-
চ
শি
৫
দিন কোট থেকে পেয়াদা এল। কোর্টের “নদেশি মত জাম ও বসতবাতী দুটোই বাজেয়া"ত করলো নতুন জামদার। মানুষ ত নয় একটা পাষণ্ড নতুন জমিদারটা। মকদ্দমার খরচ তুলতে প্রদীপকে শেষমেশ ছোট মেয়ের বিয়ের পণের টাকাটাও ব্যয় করতে হয়োছল। এমন;ক ছোট ছেলেদুটে'র জন্যে রাখা দুটুকরো বাসত্ত জামও ন্ট করে ফেলেছিল সে। মানুষটার সারা জীবনের আক্ষেপ তাই নিয়ে। নতুন জাঁমদারটা মানুষ নয়. পাষণ্ড। ওর হৃদয়টা মানুষের নয়। শন শেয়ালের রদয় ওর।' প্রায়ই সে কথা বলতো প্রদীপ।
তবে বড়োর বড় ভাঁগার জোর তাই হাসাঁরর মতন এমন সুসন্তান পেয়োছিল ও। হাসার পাল হলো প্রদীপের বড় ছেলে । সাঁতাই অসাধ্য সাধন করেছে হাসার। পাঁরবারট।ে একটা ছাতের তলায় ?নয়ে এসেছে সে। শুধু তাই নয়, বাপের মনে কোনো আভমানের আঁচ উঠতে দেয় নি। প্রদশীপই যে এখনো পাঁরবারের কর্তা, সেটা বুঝিয়ে দিয়োছল সংসারের সবাইকে এবং প্রদীপকেও। তবে বুড়ো প্রদীপ কত? সেজে বসে নি। সে সংসার চেনে। কার কি পাওনাগণ্ডা, কতটা কার দায় আর দাবি, তা সে জানতো । শুধু নিজের সংসার নয়। গ্রামের মধ্যেও সে এই সম্পর্কটা বজায় রেখোঁছল। সে জানতো সাধারণ চাষীকে বে-চেবর্তে থাকতে হলে মহ।জনদের অনঃগ্রহ থেকে বাণ্চত হলে চলবে না। এই ঘাঁনম্ঠতাটাই তার তুরুপের তাস। লে বাস করে কুঁমরের সঙ্গে বাদ করা চলে না"; এই আস্তবাক্যাট সে মেনে চলতো এবং ছেলেদেরও বাীঁঝয়েছিল সেটি । তাই ছেলেমেয়েদের চোখে মানুষটা কখনও অশ্রদ্ধেয় হয় নি। তবুও মানুষটা যেন কার হইীঁঙ্গতে সবস্বান্ত হয়ে গেল। মাথার ওপতর নিজস্ব একখ মা চালও থাকলো না তার শেষমেশ ।
তাহলেও হেরে যাওয়া মানুষটার গবেরি একটাই জায়গা ছিল। সেটা তার তিনি সুসন্তান। বলতোও সে কথা বুড়ো প্রদীপ । আম হেরে গেলেও আমার ?তনটি সুসন্তান আচে গো। আমার কত বড় ভাগ্য যে এমন তিনাঁট সন্তান পেয়েচি!' তা সে কথা বলার কারণ ছিল প্রদীপের! বাংলাদেশের একজন গাঁরব চাষী পাঁরবার তার। সে তুলনায় তার পাওনাগণ্ডা অনেক বেশি। চাষীর ঘরে যা থাকে তার ঢের বোঁশ সম্পদ আছে ত:র ঘরে। ছোট একটা গোলা আছে। আছে খড়ের পর্যাপ্ত মজত, দুটো গাই, একটা মোষ, একটুকরো জমি আর সম্বংসরের ধান। ছু জমানো টাকাও আছে তার কাছে। লক্ষনীপ্রাতিমার মতন তিনটে ব্যাটাবউ। আহা! যেমন রূপ তেমনি গুণ তাদের । তাই সুখও তার ঘরভরা। প্রদীপ স্বপ্ন দেখতো পণ্ঠপাণ্ডবের মা হবে এই ব্যাটাবউরা। তখন সবাই বলবে পালেদের ঘরে এশবর্য না থাক, সুখ আছে. আছে আনন্দ। সোঁদন আসছে যোদ্ন পদ্মগ্ঁল 'শাঁশর ভেজা হবে। আসবে ফসল তোলার কাল : তখন বকভরা আশা আর মাঠভরা কাজ নিয়ে.
ফুলে ফুলে ঈশ্বরের জয়গান গাওয়া হবে । সেই ত্বরার কাল এল বলে
দই কিন্তু প্রদপ পাল আর তার পাঁরবারের ভাগ্যে জমা ছিল এক ভয়ঙ্কর সঙ্কটের কাল, যখন দারুণ এক পরাক্ষার মুখোমাখ হলো তারা । এই শতাব্দীর 'দ্বতীয় ভাগের সেই ব্যাপক নিষ্ঠুর আবস্মরণীয় সমাজব্যাঁধ, অর্থনীতাবিদরা আধুনিক
৬
পাঁরভাষা দিয়ে যার ব্যাখ্যা করেছেন অনিবার্য দারিদ্যুচক্, দেই বিষান্ত তিন্ত কাল- চক্রের বাল হলো বাংলাদেশের এককোটি চাষী পাঁরবারের সঙ্গে প্রদীপ পালের পরিবারও । যার ফলে সমাজ কাঠামোর ধাপগুলি বেয়ে তরতর করে নেবে এল লক্ষ লক্ষ মানুষ। চাষী হলো ভাগচাষী, ভামহশীন চাষা, পরে জনমজদর। সবশেষে সর্বচ্বান্ত হয়ে সমাজচক্র থেকে ছিটকে বেরিয়ে গেল এবং হারিয়ে গেল। এই অনি- বার্য ক্রমাবনাতি ঠেকিয়ে রাখা যায় না, উল্টো গতি দিয়ে সিশড় ভেঙে ওপরে ওঠাও যায় না। এই দুর্বার স্রোতের মুখে মানুষ কেবল তার আদ্তত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে, তাকে আঁতক্রম করতে পারে না। কারণ, এক দাঁরদ্র্য ডেকে আনে আরো নিম'ম আর এক দারিদ্যু। যত রান ঝলমলে করে আঁকা হ'ক না কেন, দারদ্যের পোশাকটি বদলায় না, তা দারি্রই থাকে, অন্য কিছ, হয় না। যেমন জল 'দিয়ে ধূলেও কয়লার ময়লা রঙ বদলীয় না, তেমনি বদলায় না দারদ্যের চেহারা ।
জমিদারের সত্গে মামলা লড়তে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে 1গয়োছল প্রদীপ পাল। যা হক, আদালত থেকে মান্র আধ একর ধেনো জম তার নামে জোটে । এই জমি থেকে যে ধান পাওয়া যেত, তা 'দয়ে পালেদের পারবারের দরকারটা 'সাকভাগও মিটতো, না। প্রদখপ আর তার ছেলেদের পরের জাঁমিতে ভাগচাষ করে ঘাটাত মেটাতে হতো। মালিকরা নিত তিনভাগ আর প্রদীপরা পেত বাঁক ভাগটার আধাআঁধ। ফলে ভাতের অভাব থেকেই 'গয়েছিল ওর সংসারে । তখন ওরা ফলমূল আর শাক- সবাঁজ খেয়ে দিন কাটাতো। এইভাবে বছর দুয়েক কোনরকমে টিকে ছিল ওরা । সেই সময় নাগাদ দুটো ছাগলও িনেছিল ওরা । শুধু তাই নয়, বুড়ো বটগাছটার চে যে মন্দির আছে সেখানে নিয়ম করে পৃজোটাও দতে যেত তারা।
(বস্তু তৃতীয় বছরে বিপদের ধাক্কাটা আর যেন সামলাতে পার'লা না বুড়ো প্রদীপ আর ছেলেরা । বছরের মাঝামাঁঝ নাগাদ তাদের জামর পুরো ফলনটা হঠাৎ নম্ট হয়ে গেল পরগাছার উৎপাতে । তখন একটাই পথ জানা ছিল প্রদীপের গ্রামের একমান্ন পাকা বাঁড়র মালকের কাছে সে গেল। ইটের দেয়াল অর টালির ছাউনির একখানাই বাঁড় ছিল গ্রামে আর সব বাঁড়র মাথা ছাঁড়য়ে উঠোঁছল এর টালির ছাত।
তবে প্রদীপ একা নয়। একে একে গ্রামের প্রায় সবাইকেই যেতে হলো গ্রমের মহাজনের কাছে। বন্ধকা গয়নার কারবার করে পেটমোটা লোকটা রীীতমত টাকা- ওলা মান্য হয়েছে। সুদখোর এই মহাজনটাকে মনে মনে অপছন্দ করলেও, এর কাছে গাঁরব গ্রামবাসীদের আসতেই হয়। তার চকচকে টাক 'বাঁলয়ার্ড বলের 'মতন মস্্ণ এবং সেই-ই হলো গ্রামের আসল মানুষ । সারা দেশটা জুড়েই ছাঁড়য়ে আছে এরা আর সর্বই আসল মানুষ হয়ে আছে এই রন্তশোষক বাদুড়েরা। সুতরাং এই মানুষটার সাহায্য নিতেই হলো প্রদশপকে। পুরো জাঁমটা বন্ধক দিয়ে যে ফমণ ধান সে পেল তার দেড়গুণ তাকে ফেরত 'দতে হলো প্রথম ফসল কাটার পরেই। বছরটা সাঁতাই বঞ্চনার বছর ছিল প্রদীপ পালের কাছে। একাঁদকে যেমন ধারকর্জ, অন্যাঁদকে তেমানি অর্থাভাব। ঘরে মজৃত খাবার যেমন নেই, তেমাঁন খাদ্য কেনায় পয়সাও নেই। সে যেন এক ভয়ঙ্কর দহঃস্ব্ন। প্রদীপের এক ছেলে দন মজ্রি ধরলো । অন্তত দুটো নগদ পয়সার মুখ দেখতে পাররে এই ভরসায়। ততাঁদতন অভা"্বর চাকাটা প্রদীপের গলার ওপর চেপে বসেছে যেন। এরই মধ্যে একটা ঘটনায় এই দুরবষ্থাটা আরও সাঁংগন হয়ে উঠলো। বৈশাখের গোড়াতেই ঝড়বাদলের এক তাশ্ডব গাছ-
৭
গাছালির ঝট ধরে ফেলে দিল মাটিতে । নষ্ট হলো অনেক কাঁচা আর আর নারকেল । মোষ আর গাভী দুটোও বেচে দিল ওরা। গাই দুটো সংসারের অনেকখানি জুড়ে 1ছল। বিশেষ রান+ গাইটা। কিছুতেই যেতে চাইছিল না। গলার রাঁশ টেনে রেখে- ।ছল জ'র তার বোবা চোখ ?দয়ে যেন ধমনাত ঝরে পড়াছল। শেষমেশ ডাক ছেড়ে চেচাতে শুর করলো গাইটা। সবাই তখন থমকে গেছে তার রাগ দেখে । সবাই ভাব- 1ছল, হয়ত এটা কোনো খারাপ লক্ষণ, নাক রাধা কুঁপতা হলেন ?
গাই দুটো বেচার পর ঘরে আর কেউ দুধ পেত না। গেবরও জুটতো না ওদের। গ্রমের গাঁরব সংসারে গোবর এক অপরিহার্য বস্তু। এর সঙ্গে কাটা খড় মালরে সব সংসারেই ঘ'ুটে বানানো হয়। সাশ্রয় হয় সংসারের। তাই প্রদীপের নাঁতরা আশপাশ থেকে গোবর কুঁড়য়ে আনা শুরু করলো। কিন্তু ক্রমে এমন হলো যে ওদের দেখলেই পাড়া-পড়ীশরা তাড়া করতো । তখন ওরা চুর করা শিখলো। শুধু গে।বর নয়; আরও অনেক কিছু চার করা শিখলো ওরা । বাগানের ফল-ফুলার, পুকুরের মাছ, বুনো ফুল-যা পেত মাইল সাতেক দূরের হাটে গিয়ে বেচতো। এইভাবে উঞ্ছবৃত্ত করে ওরা রোজগারের ধন্দায় ঘুরে বেড়াত।
টাকাপয়সার অভাবটা দুটো ঘটনায় আরও তীক্ষ্য হয়ে উঠলো একসময় । হাসারর ছোট ভাইটার কান ব্যারাম হলো। একাঁদন কাশতে কাশতে রন্তু বাম করলো সে। শারবের সংসারে অসংস্থ হয়ে পড়াটা [যন একটা আভশাপ। এর চেয়ে মরা ভাল। 'কন্তু মরা ত হাতের পাঁচ নয়। হাসারর তখন মারয়া অবস্থা । সম্বল শুধু মাঁটর ভাঁড়ের সণ্টয়। সৃতরাং সেটি ভেঙে জমানো পদ্াজ নিয়ে সে ছ্টলো গ্রামের পশ্ডিতের বাঁড়। ডান্তার, বদ্যি বা ওষৃধ-পথ্য নয়। এখন দরকার ঠাকুরের কাছে মানত, একটি বিশেষ পূজা । এই আঁধকার আছে শুধু গ্রামের পুরোহিতের ৷ একমাত্র '[তাঁনই পারেন আনবার্য নিয়াত রোধ করতে।
কিন্তু পরের ঘটনার ঝাপটায় আরও গভীর দারাদ্রার পাঁকে ডূবে গেল হাসার। তখন সংসারের হাল ধরেছে সে। তার বুড়ো বাপ প্রদীপ চলে গেছে আড়ালে । তবুও প্রদীপের সম্বন্ধ করা ছেলের সঙ্গে ছোট বোনটার বিয়ের যোগাড়-্যন্ত করতে হিম- সিম খেয়ে গেল হাসারি,। বিয়ের খুটি-নাটি অনূষ্ঠানাবাধ থেকে শুর্ করে ভোজন- তাপাাযন সবই আছে। কোনো কিছুরই শ্রাট হলে চলবে না। তার ওপর আছে বিয়ের পণের যোগাড় এবং অন্য যৌতুক । ওরা যৌতুক ?হসেবে চেয়েছে একটা দসাই- কৈল একটা দ্র্যানীজস্টর রোডও, মেয়ের গায়ের দু-একটা গয়না, আর দুভার সোনা। সব মিলিয়ে কয়েক হাজার টাকার বন্দোবস্ত হাতের কাছে মজ্ত রাখা দরকার । ভারতবর্ষের সমাজ-কাঠামোয় এই পণপ্রথা এত 'নাবড়ভাবে মিশে গেছে যে আইনের আশ্রয়াটও লেকের কাছে আবান্তর মনে হয়। ফলে লক্ষ লক্ষ পাঁরবার মেয়ের বিয়ে দিয়ে সবস্বান্ত হয়ে যায়। আইনের বিচারে পণপ্রথা নাষদ্ধ হলেও সমাজের নাকের ওপরই তা 'দাব্য চালু আছে।
দেশাচারের খাই আরও বড়। বিয়ের রাতের যাবতীয় উৎসবের খরচ মোয়র বাপের। আদর-আপ্যায়ন, ভুরিভোজ থেকে শর করে পুরোহত গবদায় আন্দি সবটুকু দায় মেয়ের আঁভভাবকের। বস্তুত এমন নিষ্ঠুর প্রথার দাম এক ক'নাকাঁডও নয়। তবুও এর নির্দয় থাবাঁট ঘাড় পেতে মেনে নেয় মানুষ । কারণ সমাজে কন্যা- দান এক মহা পণ্য কর্তব্য। স.লঙ্কারা কন্যাকে বাপের বাঁড় থে ক গবদায় না করা পর্যন্ত কর্তব্যপরায়ণ পিতার কাজ সম্পূর্ণ হয় না। মেয়েকে *বশরবাঁড় পাঠিয়ে
৮
তবে নিস্তার পায় বাপ, সংসারে তার একটা বড় কর্তব্য পালন হয়। আর তখনই সে নিশ্চিন্ত মনে শেষ বিচারের জন্যে অপেক্ষা করতে পারে।
সুতরাং প্রদীপকে আরও একবার যেতে হলে মহাজনের কাছে। অন্তত হ'জার দুয়েক টাকার কর্জ তাকে পেতেই হবে। নালনী অর্থাৎ হাসাঁরর মার শেষ সম্বল ক'টা গয়না সঙ্গে নিয়েই সে গেল। একটা সোনার লকেট, দ্টো সোনার দুল আর দুগাছা রুপোর বালা। এ সবই প্রদীপের বিয়েতে পাওয়া যৌতুক, নালনীর বাসপর দেওয়া। হাতে গয়না কটা 'নয়ে ঈষৎ অনামনম্ক হয়ে গিয়েছিল প্রদীপ। তর এনে হয়োছিল সামাঁজক ব্যাঁধটা আপাত নিষ্ঠুর মনে হলেও, তার একটা অন্য মূল্যও আছে, যখন সেগুলো অসময়ের অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়। বলতে 1ক, গাঁরবের সংসারে সাশ্রয় বলতে ত এইটুকুই! যা হ"ক. প্রদীপের দূহাজার টাকার দায় 'মাঁটয়ে দল মহাজন । তবে পাওনার অর্ধেক নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল তাকে । তার ওপর চন্র- বাদ্ধ হারে সুদের মাশুল ধার্য হলো। মাসে পচি টাকা হারে বছরে ঘাট টাকা প্রদেয় হলো প্রদীপের, যতাঁদন না বন্ধকী দেনা পুরো শোধ হয়। বলা বাহুলা, নলিন* সেগুলো ফেরতের আশা কর নি। কারণ, দেনা শোধ করে গৃহস্থবধূর হাতে সেগুলো আর ফিরে আসে না। স্বামীর সঞ্জো ঘরকল্ায় এতাঁদন ধরে এই গহনা- গুলই সে আনন্দ উৎসবের দিনে প.রছে। এখন থেকে পে রিস্বহস্ত হলো। সনার অলক্ষ্যে নালনী একটা দীর্ঘশবাস ফেলোছল সোৌঁদন।
অনুষ্ঠানের দায় উদ্ধার হলো। বাঁক রইলো আপ্যায়ন-পর্ব। বরযাল্লীদের ভ্ীর- ভোজে রুই মাছ চাই। সে ব্যবস্থাটুকু ষেন ছেলেরা করে। হাসারও জানতো তল কর্তব্যের কথা । অসময়ের ব্যবস্থা নে করেই রেখোঁছল | যেবার চঈন-ভারত যুদ্ধ লাগে তার আগের বছরে ভাল ফসল হয়েছিল৷ তাই পুকুরে সে কছ পোনা ছেড়ে- ছিল। এখন সেগুলোই বড় হয়েছে। বরযা্রশদের পাতে পড়বে বড় বড় রুইমাছের চাকা । অবাক হবে আবার খুশীও হবে তারা।
বুড়ো প্রদীপ নিজের মনে মনেই ভাবাছল। তারপর আকাশের দিকে চেষে বললো, “সন্ধ্যে হতে চললো, কিন্ত সযির এখনও ি তেজ! য্যানো আগূনের গোলা । তার মানে আমাদের 'িয়াতির চাকা এখনও পুরো থুরে লই
পুরানো দিনগুলির কথা হাসার ভাবাছল। “পাল মাঁটর দেশ আমাদেব। মাটর রঙ ফ্যাকাশে । তা যে রঙই হ'ক তান যে মোদের মা ধারিন্রী! তান ভূদেবী। তাই আর কোনো মাটিই দ্যাখলাম না আমি। এই মাটকেই ভালবেসোছি : মনে হয়েছে ইনিই আমাদের মা। মায়ের য্যমন পৃথক রূপ নাই, ভালমন্দ, সৃন্দর-অসুন্দর নাই. ঠিক তেমনাট। তাই মা য্যাখন কাঁদে বাথা পায় আমরাও কাঁদি, ব্যথা পাই।'
“সোঁট জাঁন্ঠ মাস। ঘোর গ্রীত্ম ত্যাখন। দেশ গাঁ আগুনের তাপে জলে পড়ে থাক । তবুও রোজ আকাশ পানে চেয়ে থাকতাম। চেশয় চেয়ে চক্ষু বাথা হতো । তবুও চেয়ে থাকতাম । আমার পেতাষ হতো একটা কিছ হবে । ক্লেমে কেমে আকাশ ময়ূরের পেখমের বর্ণ নাছিল। গেরামের পাণ্ডিতমশাই বলেছিলেন একটা পাল্নমের পরেই বর্ষা নামবে। উীন বড় জ্ঞান মানুষ 'ছিলেন। জান'তন বোঝাতেন ঢের। পুরদ্না মানুষ । গেরামের সব মান্ষকে চিনতেন । বড় ঘরের সঙ্গন মান্ষ উঁন। সাথক ওঁর জেবন। অমন ঘরের মানুষ উন : আমাদের চেয়ে অনেক অনেক ব্ড। তাই প্রত্যেক নতুন বছরের প্রেথম দিনে বাঁড়র কত্তারা তুর কাছে যেত বর্যফল
১
জানতে । আমাদের পিতাঠাকুরও যেতেন। পণ্ডিত আঁক কষে সব বলে দতেন। কখন সুসময়, কখন অসময়। বলে 'দতৈন কখন ফসলের ভাল ফলন হবে, কখন মন্দ ফলন হবে। বলে দিতেন গেরামের সব মানুষের ভাগ্যফল। বলে দিতেন বারবেত্যর কতা, পূত্রকন্যার বিয়ের কতা । যা বলতেন সব 'নভূ্ভূল। বিয়ের মাস চলে গেলে মাটিতে বীজ পোঁতা হয়। মাটি' ত্যাখন গভ্ভবতণ হন। তা সেবারটি গ্রহনক্ষত্তের কথা হিসাব করে ঠাকুরমশাই বলে 'দিয়েছিংলন বে, বছরাট বড় ভাল যাবে। বসুন্ধরা ধনধান্যে ভরা হবে। মাঠে মাঠে ফসল, গোলায় গোলায় ধান। এমন প্দীণ্য বছর একবারই আসে দশবছরে, য্যাখন রোগ-বালাই থাকে না, মহামারশ লাগে না, পঞ্জপালের অত্যাচার নেই। এমন বছরাঁট জেবনে ক'বারই বা আসে! তা পাঁণ্ডতমশাই জানতেন সব।'
তাই ছেলের হত ধরে প্রদীপ একাঁদন গেল সেই বটগাছতলায়, যেখানে মা- গৌরীর মান্দর আছে। গ্রামের সবাই এসোছিল সোঁদন। বটগাছতলা থেকেই শুরু হয়েছে ধুধু চাষের জমি। হাসাঁরর বাপ এক দানা বীজ রাখলো দেবীর পায়ের কাছে, তারপর গড় করে বললো, 'মা, তোমার পায়ে অস্পন করলাম। হাসারি তাঁকয়োছল দেব প্রাতমার দকে। 'তাঁনই ভগবতী. মাতা অন্নপূর্ণা, সকল লোকের ঈশবরী। তিনিই সবাইকে অন্ন দেন, আনন্দ দেন, সৌভাগ্য দেন। [তানি শিবের প্রাণাপ্রয়া এবং সৌভাগ্যাবধাব্রী। তানি ভ্রাণকাঁরণশ, অভয়দাঁয়নশ এবং করুণাসিন্ধু- স্বর্পা জননী। তাই-ই হলো। তনাদনের মধ্যেই সেবার প্রথম ঝড়জল নামলো । ছাড়য়ে পড়লো নিশ্চিত আ-বাসবাণী। রোয়া বীজ প্রথম জল পেয়ে ডগমগে হয়ে উঠলো ।
হাসাঁরও নিশ্চিত হয়ে গিয়োছল যে, সেই বছরটা বাঁকুলির চাঝাদের সহাগ হবেন ঈশ্বর । প্রদীপ তাই দোর করে 'নি। মহাজনের কাছ থেকে আরও দুশো টাকা কর্জ করে বসলো । তা থেকে পণচশ টাকা নিয়ে হাসার ভাড়া করলো একজোড়া বলদ । টাকা চাঁজলশ খরচ পড়লো বাীঁজ কিনতে । বাকিটা দিয়ে কেনা হলো সার আর পোকা মারার ওষুধ । বাপবেটা শুধু নয়, সারা গ্রামের মানুষ জানতো এবার তারা ফাঁকতে পড়বে না। মুখ ণফারয়ে নেবেন না ভাগ্যদেবী। শুধু প্রত্যাশা মতই নয়, তার চেয়েও ঢের বেশি ফলন হবে। তাই ঘণ্টায় ছ'টাকা হারে একটা পাম্পসেটও ভাড়া করে ফেললো হাসার আর তার ভাইরা! তারপর শুরু হলো অপেক্ষার পালা।
রোজ সকালে বাপবেটায় মিলে জমির ধারে গিয়ে বসতো আর স্বন দেখতো কেমন করে একট, একটু করে ডাগর হচ্ছে ধানের সবৃজ ডগা । পাণ্ডত বলে 'িয়ে- ছলেন যে. বর্ষা নামবে জান্ঠর শেষ নাগাদ। 'দিনটাও বলে 'দিয়োছলেন। একটা শুক্রবার । বারটা খুব শুভ নয়। তা হ'ক। বর্ষা বর্ধাই। সে যখন আসে তখন 'দাঁগ্ব- দক জ্ঞান থাকে না তার। যা কিছু সণ্টিত, সে সব ধুয়ে মুছে যায়. কারণ সঙ্গে আনে ঈশ্বরের আশীর্বাদ ।
তন সারা বাঁকুলি গ্রমখানা, মেয়ে, পুরুষ, বাচ্চা, পশহ, পাখা, সবাই মিলে আকাশের
৯১০
[দকে হাঁ করে তাঁকয়ে আছে। সাধারণত, বর্ষার কিছ? আগেই কালবৈশাখশর ঝড় হয়। তখন আকাশ কালো হয় আর দৈত্যের মতন মেঘের দল পাঁথবীর দকে ছুটে আসে পে'জা তুলোর মত কালো মেঘের দল একটার ওপর একটা গাঁড়য়ে পড়ে। এর পিছনে আসে আর এক প্রস্থ ঘন মেঘ। তার আঁচলে যেন সোনালব জাঁরর কাজ। এই আতকায় মেঘপনঞ্জের মুখ ফেটে বোরয়ে আসে বাঁলর ঝড়। সবশেষে যে মেঘ- পুঞ্জ ধেয়ে আসে তার রঙ ঘন কালো । তখন পাৃথবী ঢাকা পড়ে যায় তার ছায়ায়। খাঁনক পরেই শুরু হয় মেঘে মেঘে ঠোকাঠ্বীক ও গর্জন। সেই গভীর ধবাঁনতে থমথম করে বিশ্বচরাচর । মনে হয় পাাথবী তৈরি হচ্ছে শেষ মুহৃতটর জন্য। তখন আকাশের বুক চিরে ঝলসে ওঠে বিদ্যুৎ । মনে হয় যেন বাঁহদেবতা মর্ততলোকের দিকে ছুড়ে দিচ্ছেন তাঁর অশাঁন। এর খাঁনক পরেই নেমে আসে করুণাধারার মতন জলধারা । বড় বড় জলের ফোঁটা তৃঁষত মাঁটর ওপর পড়ে হা'রয়ে যায় মাটির তৃষ্কার মধ্যে। আদুল গায়ে ন্যাংটো ছেলেরা আহনাদে খুশনতে ঝাঁপাঝাঁপ করে বৃম্টিধারার মধ্যে। বড় মানুষরাও আনন্দে উন্মাদ হয়। আর ঘরের কোলে দাঁড়য়ে ঘরের মেয়েরা ভগ- বানের কাছে কৃতার্থ হদয়ের গোপন ক:তজ্ঞত৷ জানায়।
জলই জীবন। আকাশ থেকে রেতঃপ্রপাতের মতন বাঁন্টধারা নেমে আসে ; মাতা- ধাঁরত্রী গর্ভবতী হন, পাঁথবীর নবজন্ম হয়, শুরু হয় জীবনের জয়গান। বর্ধাগমের কয়েক দিনের মধ্যেই মাঁটর বকে জেগে ওঠে নবপজলব। কট-পতঙ্গ আঁধকসংখায় বেড়ে ওঠে, বোরিয়ে পড়ে ভেকের দল আর সরীসৃপ এবং পাখির কুজন স্বপ্নায়িত করে তাদের নীড় বাঁধা । তখন যে 'দকে তাকাও সবুজের সমারোহ, যেন 'দকাঁবাঁদক আবৃত করে রেখেছে ঘন সবুজ একখান গাঁলচা । দনে £দনে দীর্ঘাঙ্গী সুন্দরী হয় উীদ্ভদ। তখন স্বপ্ন আর ব.স্তব যেন দহ কোলে মাখামাঁখ হয়ে যায়। অব- শৈষে একাঁদন নুভাস্থ মেঘে বহবর্ণের ইন্দ্রধন ওঠে । এই প্রতীক রেখা দেবরাজ ইন্দ্রের ধনু । তিনি দেবতাদের রাজা, তাই আকাশের ব্কে তাঁর ধনুর উদয় হলে গ্রামের চাষীরা আশবস্ত হয্তর। তারা ভাবে আরু ব্ঁঝ দেবতার রোষ মানুষকে ভোগ করতে হবে না। ইন্দ্রধন্ শান্তর প্রতঈক। দেবে মানবে তখন রেষারোষ নেই, দ্বন্ধ নেই। এবার পূর্ণ হবে ফল ফলাবর জাশা।
এ বছর পাল পারিবারের নিজস্ব ধানেক্স জাঁমর মাপ আধ একরের কিছু বোঁশ। হিসাব মত ধানের ফলনের পাঁরমাণ দশ মণের কিছু বোশ। অর্থাৎ মান্র তিন মাসের খাদ্যসণ্টয়। কিন্তু বাঁক 'দনগ্ীল? তখন অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী ফলনের জন. যখন পুরখবেরা যাতব জমিদারের জাঁমিতে দিনমজুর খাটতে । এ কাজে ঝুকি অনেক। সারা মাসে মাত্র তিন-চার 'দনের কাজ। দিনমজুরির হার তিন টাকা, সঙ্গে জলপাঁন মাড় ও ছ'টা 'বাঁড়।
পাণ্ডত বলোছিল বর্ষা ন।মবে জ্যৈষ্ঠের শেষের এক শুক্রবার । তা সৌঁদনটা এল এবং চলেও গেল। আকাশ তেমনি নির্মেঘ এবং যেন আগুনের পণ্ড । পরের 'দিন- গুলোও তেমনি কাটলো । ধারালো মসৃণ সাদা ইস্পাতের মতন আকাশের চেহারা একটুও বদলাল না। ধানের চারাগলো ইতিমধো হলুদ হতে শুরু করেছে। গ্রামের বয়োজোন্ঠরা স্ম'তি তোলপাড করে মনে করবার চেস্টা করলো শেষবার কবে অসময় গেছে। কেউ বললো গাম্ধীজীর 'তিরোধানের বছরাঁট এমাঁন অসময়ের বছর 'ছিল। সেবার নাক আবাঢ়ের শেষ সপ্তাহে বর্ষা নেমৌছল। আর একবার নাক পয়লা আষাট়েই বৃন্টি নামে এবং ভাদ্র পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। সেবারটি ছিল আতি-
১৯
বর্ষণের বছর। বর্ষার শূরুতেই ধানের কাচ চারাগুলো জলে ডুবে যায়। মোটকথা আতবৃম্টি বা অনাবৃষ্ট কোনটাই যে বাঁঞ্ত নয়, তা সবাই জানতো ।
ধারে ধীরে অবস্থা এমন হয়ে উঠলো যে পরম আশাবাদীও উৎকণ্ঠামদন্ত হলো না। তবে কি সাঁতিই ভগবান রুষ্ট হয়েছেন? প্রতিবেশীদের নিয়ে হাসার ছন্টলো গ্রামের পণ্ডিতের কাছে। পাঁণ্ডত বিধান দল যে সর্বাবঘন্ননাশক অনাথবন্ধ গ্রণেশকে সন্তুষ্ট করতে হবে তবে বিঘ] নাশ হবে এবং কার্যাসাম্ধ হবে। অর্থাৎ বাঞ্চত বর্ষার আগমন ত্বরান্বিত করবেন 'সাদ্ধদাতা গণেশ। সুতরাং ভীস্তয্ন্ত চনে গণেশকে পুজো করতে হবে। গ্রামের মানুষ ধার-কর্জ করে বামুন পাঁণ্ডিতের হাতে দুটো ধুতি, একখানা শাড়ি অ:র কুঁড়িটা টাকা দেবার পর. পূজার আয়োজন হলো। ঘিয়ের প্রদীপ জেবলে মন্পরপাঠ করে গণপাঁত বন্দনা করলো র্রাহ্গণ।
কিন্তু গণেশ বা অন্য কোনো দেবতাই ওদের প্রার্থনা হয়ত শুনতে পানান। সুতরাং বিঘন নাশ হলো না এবং বর্ধাও এল না। নিরুপায় হাসার একাদন পাম্প ভাড়া করে আনলো এবং তার ক্ষেতে জলসেচ করালো। একটানা ছ'ঘশ্টা জল- সেচের পরাদন দেখা গেল যে সদ্য ওঠা চারাগুল ডগমগে হয়ে উঠেছে। কিন্তু তার জাঁমর পাচুশই পড়ে থাকা অনাদের ক্ষেতের অবস্থা অত্যন্ত করদণ। জলের অভাবে চারাগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। সবই বুঝতে পারাছল যে বিপদ ঘানয়ে আসছে। এবার কোনো ফলনই হবে না। দূর দিগন্তে মহামারীর করাল ছায়া দেখ মানুষজন মনে মদন শটে উঠাছিল।
আর কেউ এন আাকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে না। মহাজনের ট্রানীজিসটর রোডওর ঘোষণা সবাই শুনেছে । সবাই জানে যে এবার এ বর্ষা দৌর করে আসবে। এখনো আন্দামান "্বীপপুঞ্জেই এসে পেঁছয়নি বর্ধার মেঘ। কিন্তু কোথায় আন্দমান দবপপুঞ্জ ; বাঁকুলি থেকে কত দূরে 2 মোটকথা রেডিওর ঘোষণা ওদের নতুন কিছ শেখাকৃত পারলো না। হাসার বললো, 'নতুন আর কি শেখাবে রেডিও। বর্ষার যে দোর আচে তা আমরা জানতাম ।' জঙচ্ঠীর শেষ নাগাদ গ্রামে বাউলের দল এল। ওদের পরনে গেরুয়া পোশাক। গ্রামের পথঘাট ঘুরে ঘঃরে ওরা কের নামগান শোনায়। একাঁদন গৌরামায়ের মান্দরে গিয়ে আকাশের দিকে তাঁকয়ে ওরা গন ধরলো । কারও হাতে একতারা, কারও হাতে কর্তাল। বটগ্রাছের তলায় দাঁড়য়ে ওরা গান ধরলো। গানের উদ্দেশ্য হলো ভ্রাম্যমাণ মেঘকে আহবান করা। ও মনের পাখ! এমন ঘুরে বোঁড়ও না। তুম জানো এতে আমাদের কত ক্লেশ হয়। তামি দুদণ্ড দাঁড়াও আর আমাদের জল দাও ।'
গ্রামে একটাই জলাশয়। দেখতে দেখতে জলাশয়ের জল প্রায় তলানিতে এসে ঠৈকলো। গ্রামবাসীদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। পাম্প দিয়ে জল তুলতে কতাঁদন লাগতে পারে তার হিসেব করছিল ওরা। একাঁদন পাঁকের ভেতর থেকে মাছ তুলে আনলো ওরা আর সকলের মধ্যে বাল করে দিল। এত দুঃখের মধোও এটা যেন আশাতণীত এক আনন্দের ঘটনা ওদের কাছে। অন্তত একাঁদন ওরা পেট পুরে মাছ খেতে পারবে। অনেকে আবার "শুটকী" করে রাখলো ভাঁবষ্যতের জন্যে।
হাসাংরর ক্ষেতের ধান আর বোঁশাঁদন সবুজ থাকলো না। রোদের দাবদাহে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছিল ফসল। সেই ঝলমলে সবৃজ ভাবটা ধারে ধীরে চলে গেল। পাঁশ্টে হয়ে যাচ্ছে ধানের ডগা । ক্রমে খসে খসে পড়তে লাগলো ধান। এমন স্বাস্থাবতশ চারাগৃলো চোখের সামনেই মদ্র হেজে যাচ্ছে। হায় হায় করে
১৭
উঠলো হাসারর প্রাণটা। এত বত্তআন্ত ভালবাসার এই পারণাম! বিধব হাসার পাথরের মতন স্থির চোখে তাকয়োছল তার ক্ষেতের দিকে। এ বপন [ক কাটাতে পারবে সে তবে শুধু একা হাসার নয়। সারা গ্রামখানাই 1বমূ হয়ে গেছে এই আকস্মিকতায়। মাথা তুলে দাঁড়াবার শীন্তটুকু ৬.রা যেন হারয়ে ফেলেছে । বোধহয় তারা তখন ফাঁকরের কথা ভাবাছল, ঈশবরপ্রেমে মাতোয়ারা হয়ে খেদ করে যে গাইতো, 'হায়! আমার সোন'র ফসলের গোলাঘরের চাঁবটা কে নিল (গা! ও সোনা যে আমার আর রইল না।' বাস্তাবক, সোঁদন বাঁকাঁলর সবাই যেন »াঁবটা হারয়ে ফেলোছল।
সারাটা রাত গুম হয়ে ভাবলে। হাসার। যা বাস্তব সত্য মানতেই হবে ত। [কন্তু এখন ?ি করবে সে পরাদন সকালে বাপ-ভাইদের সঙ্গে পরামর্শ করতে বসলো সে। হাসারর বাপ প্রদীপ দশর্ঘবাস ফেলে যা বললো তাতে দুশ্চিন্তা বেড়ে গেল হাসারর। প্রদীপ মাথা নেড়ে বললো, 'এ মরশুমে ফসল আর হবেক নাই। এই শ্যাষ।' কথাটা কানে গেল হাসারর ম।'র। তাড়াতাড়ি কলাঁসর ঢাকা খুলে চাল মাপতে বসলো সে। হাসারি জানে এভাবে চললে দু'মাসের সণয়ও ঘরে নেই। তারপর কি হবেও ধক হবে ভাসে জানে না। এইটকু নাত জানে যে বড় দুঃসময় তাদের। আড়ালে চোখের জল মুছে হাসারির মা অবশ্য সান্বনা দয়ে বললো, য় কি বাবা! চারমাস খ,ব ভালোই চলে যাবে। তারপর একবেলা জানাজ- তরক।?র খেয়ে চালাবো। হাসার কোনো জবাব দিল না। সে জানে এটা মিথ্যা। সর্বৈব মিথ্যা । কখন বুড়ো প্রদীপ এসে দাঁড়য়েহে "এল করে নি কেউ। হাসাঁরর মার কাঁধে একটা হাত রেখে প্রদসপ বললো, 'আমরা বুড়ো-বুঁড় রে নাই বা খেলাম। বাচ্চারা ৮টি অন্ন পাক।' স্বামীর কথায় যেন বড় একটা ম্াশবাণ পেল হাসারর মা। ঘাড় নেড়ে সায় দিল সে।
কিন্তু পালেরাই নয়, গ্রামের অনেক পরিবারের সম্বল শূন্য হযে গেছে ভতাঁদন। এই বাস্তবাঁচন্র যে কত রূঢ় তার প্রমাণ পাওয়া গেল একটা ঘটনাশু। গ্রামের সবচেয়ে গারব সহায়হশন শ্রেণী হলো হরিজনরা। তারা চেয়ে-চিন্তে কাঁড়য়ে-বাঁড়য়ে খায় এবং কম্টে-সৃন্টে একধারে পড়ে থেকে জীবন যাপন করে। তারা বুঝোঁছল যে এবার এক দানা শস্যও মাঠে-ঘাটে পড়ে থাকবে না, যা কুড়িয়ে পাওয়া যাবে। একাঁদন ওরা তাই সঙলবলে গ্রাম থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল। কেউ না বললেও সবাই বুঝলো ওরা গেছে ষাট মাইল দূরের শহর কলকাতায়। একে একে অনেকেই তাদের অনু- সরণ করলো শুরু হলো মানুষের মহামাছল। দেখা গেল বাঁকালর ভিটেমাটি মিরর হাতির হারল সারারাত হুক রিকি
1
তবুও হাসাঁররা টিকে ছিল। কিন্ত যে দিন প্রতিবেশী আঁজত ভদ্রাসন ছেডে কল- কাতা যাবার কথা বললো সোঁদন হাসারির মনটা ধক করে উঠোছল। অনেক দিনের ঘনিষ্ঠতা দুই পাঁরবারের । মনে লাগাই স্বাভাবিক । ভদ্রাসন ছেড়ে দেবার আগে বুড়ো আঁজত কুলাঙ্গ থেকে ঠাকুরের পট নামাল। ভিটের প্রদীপ নেভাল । তারপর ঠাকরের পটগৃলো একটা কাপড়ে বেধে পশুটুলি করলো। পুট্টাীলর মধ্যে বন্দী ঠাকুর গক হাসছিলেন 2 হয়ত তাই। আঁজতের বড় ছেলে দোরগোড়ার পাশে একটা গর্তের মধো কিছু চাল আর ফুল রেখে 'দিল। এটা বাস্ন্র-সাপের বাসা। যতাঁদন তারা ফিরে না আসে ততাঁদন এই ভদ্রাসন রক্ষা করবেন বাস্ত্রসাপ। কিন্তু যাবার ঠিক পৃবরক্ষণে'
্
১৩
কালো বেড়ালটা' দেখে মন খারাপ হয়ে গেল ওদের। এ ফি অলক্ষণ! আঁজতের মন বিষ হয়ে গেল। স্থির করলো সে আগে যাত্রা করবে। বাঁকরা অন্য পথে যাবে। যাত্রার আগে পোষা পাঁখর খাঁচার দরজা খুলে দিল আজতের ছেলে । খাঁচার বন্দী পাখ মুস্ত হক, উড়ে যাক বনে। কন্তু দোর খোলা পেয়েও তখান উড়ে গেল না পাঁখ। কিছুক্ষণ বসে রইল খাঁচার মধ্যে তারপর এক ডাল থেকে আর এক ডালে ল'ফাতে লাফাতে চললো ওদের পিছ পিছু। আঁজত আর পাঁরবারের সবাই 'তখন বাকল গ্রামের কচা রাস্তার ধুলোর মধ্যে ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেছে।
প্ত্ম কাটলো, কিন্তু এক ফোঁটা বৃ্টিও হলো না সেবার। এখন শীতের বাঁজ বোনার কাজ শুর করতে হয়। [কন্তু জল ছাড়া বপন হবে কি করে2 অর্থাৎ এ ফসলটাও 'নম্ফল যাবে। হাসারদের একটা গাই তখনও ছিল। 'কন্তু মর্মা'ন্তক দশা তার। 'জরাজরে হাড় ক'খানা চামড়ার সঙ্গে লেগে আছে শুধু । অনেকাঁদন ধরেই খড়-ভুষ ছুই 1দতে পারে 'ীন তাকে । একাঁদন ভোরবেলায় হাসার দেখলো কলাগাছের ছায়ায় 'জভ বার করে ধদকছে গরুটা। হাসার বুঝতে পারাঁছল গাঁ-ঘরে আর একটা জীবও বে*চে থাকবে না।
শকুনের মতন ওত পেতে ছিল কসাই। পরাঁদন ঠিক সন্ধান করে হাঁজর হলো। মান্র পণ্টাশ টাকায় মুমূর্ গরুটাকে গাঁড়তে তুললো । যাবার সময় লোকটা হাসাঁরকে আর একটা নতুন গাই কেনার পরামর্শ দিয়ে গেল। ইতিমধ্যে আশপাশ থেকে আরও গাই মরার খবর ছাঁড়য়ে পড়েছে। একাঁদন শবগুলো মাত্র পনেরো টাকা ?দয়ে কিনে নিয়ে গেল চামড়াওলারা ।
অগ্বাণও পে'রয়ে গেল। বাঁকুলির তখন শোচনীয় অবস্থা। কোথায় গেল সেই শ্যামল-সংন্দর গাঁয়ের শ্রী। মানুষজন কমে গেছে। যারা আছে তারাও যেন মরে আছে। ঘরে শিশুর হাসি নেই। গোয়ালে গরু নেই। ঘরে দুধ নেই। এমনাঁক শাক- পাতা সেদ্ধ করার জহালানিও নেই । ঘরে শ্রী নেই, স্বাস্থ নেই। উলঙ্গ শিশুরা চণ্টলতা ছেড়ে স্তব্ধ হয়ে গেছে। বেলুনের মতন তাদের পেটগুলো ফোলা ফোলা । সবাই ধপৃকছে। হয় জবরজবারি নয়তো আমাশা বা পেটের রোগে যে কটা মরে হেজে গেল সেই কটাই বেচে গেল। আসলে, উৎকট বুভুক্ষার দাপটে বাচ্চাগুলো ছন্ন- ছাড়া হয়ে ঘুরে বেড়াত।
পৌষ মাসের মাঝামাঝ শোনা গেল যে জেলা শহরে সরকারী ন্রাণ দেওয়া হচ্ছে। কুঁড় মাইল দুরে জেলা শহর। প্রথম প্রথম কেউ যেতে চাইছিল না। “আমরা চাষী, 'ভাঁখাঁর লই।' বললো অনেকে । হাসার ওদের বোঝালো, “সরকার ভ্রাণ দচ্ে মেয়ে আর বাচ্চাদের জুন্যে। আমাদের জন্য এ নাণ লয়।' ধ্দনকয়েক পরেই সর- কারের লোক এসে জানিয়ে গেল নতুন সরকারী উদ্যোগের কথা । “কাজের বদলে খাদ্য” এই নতুন কর্মেদ্যগ নিয়েছে সরকার । কর্মকাণ্ডের 'বশাল পাঁরাধ ; অনেক গাছ বসানো ইত্যাদি । হাসার বলোছিল, 'রোজ আমাদের দিত এক সের করে চাল। সেটাই সারা পাঁরবারের একাঁদনের খাবার। আর রোজ রোডও থেকে বুলতো দেশে কোথাও অভাব লাই। ভান্ডারে মজুত আছে অনেক খাদ্য।'
মাঘ মাস নাগাদ একটা দারুণ দুঃসংবাদ ছাঁড়য়ে পড়লো। গোরাঁমা'র থানের পাশে যে কুয়োটা আছে তার জল শাীকয়ে গেছে। কয়েকজন নেমে গেল তরতর করে। উঠে এল মুখ শুকনো করে। যা রটেছে তা মিথ্যে নয়। কুয়োর তলায় জলধারার
১৪
উৎস শুকিয়ে গেছে। গ্রামে আরও 1তনটে কুয়ো আছে। তাদের জলের বরাদ্দ বে'ধে দেওয়া হলো, যাতে সবাই জল পায়। 'কন্তু সেখানকার জলও পর্যাপ্ত নয়। তাই প্রথমে এক বালাতি, পরে আধ-বালাতি, এইভাবে জলের বরাদ্দ কমতে লাগলো এক), একটু করে। শেষ পর্য্তি জলের বরাদ্দ দাঁড়ালো এক ঘাঁট। তাও আবার পান করতে হবে সবার চোখের সামনে বসে। শেষ অবাধ অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে লাঠ হাতে চৌি বসলো কুয়োর ধারে । শোনা গেল কয়েক মাইল দ্রে বুনো হাতির দল একটা ডোবা আগলে দাঁড়য়ে আছে এবং যাকে দেখছে তাকেই তেড়ে আসছে।
দেখতে দেখতে মাইলের পর মাইল চাষের জাঁমর চেহারা হরে উঠলো মরা এবং শুকনো। পাথরের মত শন্ত মাটর জায়গায় জায়গায় গভীর ফাট। বড় বড় গাছ- গ্লোর সর্বা'গ য়ে ঝরে পড়ছে বোবা কানা । চৈহারাগুলো দেখলে সাত্যই জল আসে চোখে। পাতাঝরা শ,.কনো অনেকগুলো গাছ ইতিমধ্যেই মরে গেছে।
শেষ অবাধ চেন্টা করেছিল কিন্তু ঠোঁকয়ে রাখতে পারলো না প্রদীপ । একাঁদন সবাইকে ডাকলো বুড়ো। ধাঁতর ?গ্ট খুলে বার করলো পাঁচখানা দশটাকার নো আর দুটো একটাকা। তারপর সেই টাকা কটা হাসারর হাতে দিয়ে বললো, "তুমি আমার লায়েক বেটা। তুমার হাতেই আমার সম্বল তুলে 'দলহম। তুম কলকেতায় [গিয়ে একটা কাজ খুজে লাও। কলকেতা বড় শহর, একটা যা হয় কিছু জুটবেকই। তখন আমাদের িছ_ পাঁঠও। শুধু তুমিই পার অ'মাদের বাঁচাতে ।' হাসার তখন বাপের পায়ের ধুলো 'নিল। প্রদীপও ছেলের মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলো। তখন শন্ত করে ছেলের কাঁধটা ধরোছল প্রদীপ। হাসারর মা নিঃশব্দে কাঁদছিল।
পরাঁদন ভোরেই যাব্লা করলো হাসার । প্রথম সূর্যের আলো যখন সবে গায়ে মেখেছে দিগন্ত, যখন সবে ফিকে হচ্ছে কালো রাত, তখনই বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে যান্লা করলো হাসারি। একবারও 'িছন ফিরে তাকাল না। একহাতে অমৃতা অন্য হাতে একটা ঝোলা নিয়ে আগে আগে চলছে হাসারি। িছনে চলেছে অলকা আর তার দুই ছেলে মনোজ ও শম্ভু । হাসাঁরর ঝোলার মধ্যে একটা জামা আর এক- জোড়া চাঁটজুতো ঢুকিয়ে দিয়েছে অলকা। অলকার বাপের বাঁড় থেকে জামাইকে
ধদঁয়োছল ও দুটো। এমনভাবে ভটেমাঁটি আর ভছাসন ছেড়ে আগে কখনও
যায় নি হাসরি। তাই কিছুতেই মনটা শান্ত করতে পারছিল না সে। অচেনা-অজানা জায়গা । পদে পদে ভয় আর আশঙ্কা ছড়িয়ে আছে সেই শহরে । কে জানে কি লেখা আছে ভাগ্যে! মনোজ আর শম্ভ্ ভার খুশী। ওরা নাচতে নাচতে চলেছে অজানার দিকে, যেন আঁভিযান করতে চলেছে তারা ।
চার
পুরো সকালটা লেগে গেল স্টেশনে পেশছতে। কিছুটা বাসে চড়ে ওরা যখন স্টেশনে পেশছলো তখন বেশ বেলা । তারপর রেলের একটা দ্বিতীয় শ্রেণীর কাম- রায় ঠাসাঠাঁস ভিড়ের মধ্যে রাতটুকু কাটিয়ে হাসাররা যখন হাওড়া স্টেশনে পেশছলো তখন সবে ভোর হয়েছে । হাওড়া স্টেশনের ব্যাপার-স্যাপার দেখে হাসার তাজ্জব । প্লাটফর্মে নামার সঙ্গে সঙ্গেই জনম্তরোত যেন তাদের গ্রাস করে ফেললো । কয়েকটা মূহূর্ত যেন 'ঢাঁপর মতন ওরা স্রেফ দাঁড়য়ে থাকলো। সব দিক থেকেই
২৬ ৮
প্রোতের মত মানুষ আসছে যাচ্ছে। মাথায় পাহাড়ের মত বোঝা নিয়ে কুঁলরা দাব্য চলেছে। সংসারের যাবতীয় জানিসপরর ফোর করে বেড়াচ্ছে ফোঁরওয়ালা। হাসার আর তার বউ অলকা জীবনে এতরকম 'বাক্তর জিনিস দেখে নি। কোথাও পিরামিডের মতন উচু করে সাজানো কমলালেবু । তার পাশেই নিত্য ব্যবহার্য জানিসের পসরা। ছার, কাঁচ, তালা, ব্যাগ, চিরান, গায়ের কাপড়, ধূতি, শাঁড় কি নয়। তাছাড়া আছে জুতো পাঁলশওলা, মু, 'চাঠপত্তর মুসাবিদা করার লোক, জ্যোতিষাঁ। ভিড়ের সঙ্গে মিশে আছে গায়ে ছাইমাখা সাধূবাবা। কুঁড় পয়সার 'বান- ময়ে পৃণ্যকামী যাত্রীর মুখে কয়েক ফোঁটা গ্রগার জল ঢেলে 'দচ্ছে। এই কোলাহলের আবর্তে পড়ে হাসারিরা প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেছে তখন। কি করবে, কোথায় যাবে 2 রাতটাই বা কোথায় কাটাবে 2
হাসারি কিছুক্ষণ ভিড়ের মধ্যে লক্ষ্যহশীন ভাবে এলোমেলো ঘুরলো। ঘুরতে ঘুরতে তার নজরে গেল বড় হলঘরটার একটা কে।ণের €দকে । সেখানেও ওদের মতন একটা বিহারা পাঁরবার সংসার গুছিয়ে বসেছে । ওদের সঙ্গে একটা উনুন, একটা স্টোভ আর খানকয়েক কলাইকরা বাসন । দলটাকে দেখে হাসারর কেমন যেন ভরসা হলো। দলবল নিয়ে ওদের কাছে যেতেই লোকগুলো তাড়াআঁড় তাদের পাঁরবারের সঙ্গে হাসারির পরিবার ছেলেমেয়েদের বাঁসয়ে দিল. যাতে প্ীলশের নজর না পড়ে এদের ধদকে। হাসারির মতন এই পাঁববারাঁটও চাষী পাঁরবার। তবে এরা বাঙালশ নয়। সামান্য বাংলা বলতে পারে । ওর।ই বললো যে. পাছে অনাহারে থাকতে হর, তাই ছেলেমেয়েদের ভিক্ষে করতে পাঠিয়ে দিয়েছে। লঙ্জার কথাটা বলার সময় বেশ সঙ্কোচ হচ্ছিল ওদের । হাসার বললো ওর গাঁয়ের একজন নাক বড়বাজার অণ্চলে মূটেগিরি করে। তার সন্ধান করতেই সে বেরোবে । ওরা পরামর্শ ?দিল হাসার যেন ছেলেমেয়েদের তাদের কাছে রেখে একা বেরোয় । হাসার মনে মনে ভার স্বস্তি পেল ওদের কথা শুনে. হাসার তখন কিছু খাবার কিনতে বোৌরয়ে গেল। খানিক পরেই বেশ ক'টা সিঙাড়া কনে আনলো সে। বিচিত্র চেহারা আর স্বাদের এই রকম খাদ্যবস্তুর সঙ্গে চাক্ষুস কোনো পরিচয় ছল না হাসারির। যাই হ'ক, নতুন বন্ধদ- দের সঙ্গে ভাগ করে 'সিঙাড়া খেল হাসাররা । ছেলেমেয়েরা খুব খুশী, খুশী হলো অলকাও। কাল রাত থেকে পেটে কিছুই পড়ে নি তাদের। খুব আগ্রহ নিয়েই সবাই মিলে দিঙাড়া খেল। খাওয়া-দাওয়া সেরে ওদের হেপাজতে বউ ছেলেদের রেখে হাসারি বেরোল স্টেশন চত্বর থেকে. যেন. ঝাঁপ দিল অগাঁণত মানুষের সমু্ে।
হাসারিকে দেখেই বোঝা যায়, শহরে সে আনকোরা নতুন। তাই এই নতুন আমদানাটিকে ঘিরে ফেরিওয়ালাদের মধ্যে যেন উৎসাহের প্লাবন উঠলো । চকিতে তারা ঘিরে ধরলো হাসারিকে তাদের বিক্রির পসরা িয়ে। কেউ কলম বেচছে, কেউ বা নানারকম রঙ করা মম্টাল্ন, কেউ লটারির ।টিকিট। 'ভিখিরীর দল প্রায় গায়ের ওপর এসে পড়ছে। একটা কুষ্ঠ রুগী তার জামা ধরে টানাটানি শুরু করলো । হাসার রীতিমত বিদ্রান্ত। কোনরকমে এদের হাত থেকে রেহাই পেয়ে সে একটু এগয়ে গেল। কিন্তু সে জায়গাটা যেন গতি আর শব্দের একটা ঘূর্ণাবর্ত। বাস, লরি, ট্যাক্সি, ঠেলা, ঘোড়ার গাঁড়, মোটর বাইক সবাই যেন তারস্বরে চংকার করছে আর পাগলের মতন চক্রাকারে ঘুরছে। সবাই চেষ্টা করছে আগে যাবার কিন্তু পারছে না। শব্দের জটলা আর াবশঙ্খলায় এলোমেলো হয়ে এক ভয়ঙ্কার ঘাসের পারবেশ সৃত্টি হয়েছে সেখানে । বাস মোটরের হর্ন, ইঞ্জিনের গো গোঁ শব্দ, ঘোড়ার গাঁড়র
৯৬
ঘণ্টা, সব 'মলিয়ে যে ধ্বানময় জগ.তর স্াষ্ট হয়েছে তার লক্ষ্য বোধহয় একটাই, কে কতটা শব্দ সৃষ্ট করতে পারে। হাসারর মনে হাঁচ্ছল এদের সমবেত শব্দ হয়ত প্রথম কালবৈশাখার বজ্রপাতের শব্দের চেয়েও ভয়ঞ্কর। সে ভাবলো এবার বোধহয় শব্দের আঘাতে তার মাথাটা ফেটে যাবে।
কিন্তু তার সবচেয়ে অবাক লাগাঁছল ট্রাফক পুীলসটাকে দেখে । এত কোলা- হলের মধ্যেও লোকটা কেমন বেন 'নার্বকার। 'নার্ববাদে হাতের খেটেটা নাডয়ে সে যাশবাহনগুলোকে নদেশ দিয়ে চলেছে। ভিড ঠেলে ওর কাছেই হাসার বড়বাজার জরগাটার হাঁদস ?ানতে গেল। লোকটা প্রায় আকাশের দিকে হাতের বেটে লাঠিতা উপচয়ে একটা দিক দোঁখয়ে দিল। হাসার অবাক। আকাশচুম্বী হাওড়া ব্রিজের গায়ে জড়াজাঁড় করা ইস্পাতের গ্রাল্থগুলোর £দকে লোকটা হাতের লাঠি উপচয়ে আছে। গর নম বড়বাজার £ পুলিসাটা ঘোঁতি ঘোঁত করে বললো, "ওর ওপাশে ।' অর্থাং লড়বাজার নামক জায়গাঢার অবস্থান সেতুর ওপাশে এবং কলকাতা ও হাওড়া নামক এই যমজ দাউ শহরের সেতুবণ্ধ হালো এই ব্রিজ -- পৃথিবীর সবচেয়ে গনাকীর্ণ এবং বাস্ত সেতু।
প্রাতাঁদন দশ লক্ষাধিক মানুয এবং লক্ষাধিক যানবাহন এই সেতুর ওপর "দিয়ে পারাপার করে। পারাপারের সমর গাঁড় ও মানুষের এমন জট পাকায় যা দেখে সমদদ্রের বুকে ভয়াবহ জলাবর্তে'র কথা মনে হয়। হাসার একবার তাঃকয়ে দেখলো সেই আবতেরি দিকে। ভারপর অপ্রাতহ্ত আকর্ষণে গিয়ে পড়লো সেই ঘূর্ণাবতের একেবারে মাধ্যখানে। তার এপাশে-ওগাশে তখন শুধ গাঁড় আর মানুষ । ফোৌঁর-
৫ঘালারা বসে গেছে রাসতর ওপরে । ক্ষিপ্রহাতে বেচাকেনা চলছে। গাঁড় ঘোড়ার
গুনো নির্দিষ্ট সংকীর্ণ সারির মধ্যে পববক্ম যানবাহনই আছে এবং এমন দু'ভ্দ্য শটলা সষ্টি কুরছে যে. মানুষ গলার ফাঁকও নেই। পাথরের ঢাঁপির মত নিশ্চল হয়ে গেছে ট্যাম। তাদের পোবঝয়ে যেতে গিয়ে আটকে পড়েছে মালবাহী লারগুলো এবং রাগে গো গো শব্দ করছে। ল।ল রঙের দোতলা বাসের গা থেকে ঝুলছে আওুরের থেকার মতন মানুষ করেকটা বাস বিপজ্জনকভাবে একপহেশ হেলে আন্ছ। হঠাৎ দেখলে ভ্রম হবে এই বু রি কাত হয়ে গেল। ঠেলাগাঁড়িগুলো বোঝাই কা ভারি ভার মালপত্র 1নয়ে প্রার হামাগুড়ি দিয়ে চলেছে হতভাগা চি নিদেশে। লোকটার হা?তব দড়দড়া £শরাগুলো দেখে মনে হচ্ছে এখান বাীঝ বিদীর্ণ হবে হাতের পেশী । দুঃসহ কেঝা আর যন্বণায় দুমড়ে সা মুখ নিয়ে “ঘাড়ার মত কদম ফেলে ছুটে চনোছে কুঁলিরা। একদল ছুটছে কাঁধে বাঁক নিয়ে বাকের দুপাশে ভ্রামভরা দুধ বা অন্য গানীয়। একপাশ ?দয়ে চলেছে মোষ, গরু, ছাগলের পাল। একটা লোক ছড়ি হাতে তাদের তাঁড়য়ে নিয়ে যাচ্ছে। শব্দের তাড়া খেয়ে অবোধ জানোয়ারগুলো মাঝে মাঝে গাঁড়র গোলক ধাঁধার মধ্য হারিয়ে যাচ্ছে আর ভয় পেরে ছুটোছুটি কছে। ওদের দেখে হাসারর মনে হলো. "আহা! কি কম্ট!' হয়ত তখন ডার মনে পড়ে যাচ্ছিল ফেলে আসা গ্রামখানির সেই শান্ত 'নস্ত- রঙ্গা জীবনযাত্রার কথা ।
রিজটুকু পোঁরয়ে হাসার এসে পড়লো কলকাতার দদক। এাঁদকটায় মানুষ এবং গাড়র জটলা আরও ঘন। হঠাৎ তার নজরে পড়ে গেল একটা অদ্ভূত চেহা- রার শকট। দূচাকাওলা এই গাঁড়র সঙ্গে লাগানো দুটো শকট-দন্ড এবং দল্ডদুটির সাঝখানে দাঁড়িয়ে একজন মানুষ যান্ীসহ গাঁড়টা অবলীলায় টেনে নিয়ে চলেছে
১৭
হাসার এই প্রথন মানুষটানা 'রক্জা দেখলো । দেখে তার অবাক লাগছিল। তার কেবলই মনে হচ্ছিল কি আশ্চর্য এই শহরটা । এখানে ঘোড়ার মতন মানুষও গাঁড় টনে! যত সে বড়বাজার এলাকাটার কাছাকাছি যাচ্ছিল, ততই এই 'বাচন্র শকটাট তার নজরে পড়তে লাগলো। কখনো মানৃষ কখনো মালপত্র নিয়ে টানতে টানতে চলেছে একটা লোক আর তাকে দেখে হাসারি ভাবছে, এমন একটা গাঁড় টানার ক্ষমতা কি তার হবে নাঃ গাঁড় টেনে